স্টাফ রিপোর্টার :
শিল্প-বাণিজ্যে সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ; একথা কারোরই অজানা নয়। বিসিক ও আদমজী ইপিজেডসহ অন্যান্য স্থানেও গড়ে উঠেছে গার্মেন্টস, নিটিং, ডাইং ও বিভিন্ন কলকারখানা। এসকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ীদের অন্যতম ঠিকানা। তবে এই জেলায় ব্যবসায়ীরা ঠিকানা গড়লেও অনেক ক্ষেত্রেই তারা জিম্মি হয়ে পড়েছিল প্রভাবশালীদের কাছে। এমনকি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোও মুষ্টিমেয় কয়েকজনে জিম্মি ছিলো- এমন অভিযোগও ছিলো পুরনো। তবে দেশের পটপরিবর্তনের পর পরিবর্তন ঘটেছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ ও চেম্বার অব কমার্সের নেতৃত্ব এবং কর্মতৎপরতায়। নেতৃত্বের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন ঘটেছে ব্যবসায়ীদের চিন্তা চেতনা এবং আস্থার জায়গাতেও।
তারা বলছেন, বিগত সময়ে যেখানে ব্যবসায়ীদের অনেকেই প্রভাবশালীদের কাছে জিম্মি ছিলো, সেখানে বর্তমান বিকেএমইএ এবং চেম্বার অব কমার্সের নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে সেই জিম্মি দশা অনেকটাই কেটে উঠেছে। মূলত, মাসুদুজ্জামান চেম্বার অব কমার্সের দায়িত্বভার গ্রহণের পর ব্যবসায়ীদের মাঝে আত্মবিশ^াস ও সাহস সঞ্চার হয়েছে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ছিলেন খালেদ হায়দার খান কাজল। ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এই কাজলের হাতে যেমন গোটা চেম্বার অব কমার্স জিম্মি ছিলো, ব্যবসায়ীদের অনেকেরই অবস্থা ছিলো প্রায় একই রকম। একটি প্রভাবশালী মহলকে তুষ্ট না করে ব্যবসা করাটাও অনেকের জন্য মুশকিল হয়ে উঠেছিল। অনেকের মাঝে চাপা ক্ষোভ থাকলেও তা প্রকাশের কিংবা মুখ খোলার সাহস দেখাননি কেউ।
তবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানসহ তাদের ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে পরিচিত খালেদ হায়দার খান কাজলকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এরই মাঝে দেশের সকল সেক্টরে যখন পরিবর্তন ঘটে, তখন চেম্বার অব কমার্সের নেতৃত্বে আসেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামান। তিনি চেম্বারের নেতৃত্বে আসার পর ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনকে চাঁদাবাজ ও রাজনৈতিকদের থাবা থেকে মুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের অভয় দেন।
গত সাত সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি মাসুদুজ্জামান বলেছিলেন, ‘গত পাঁচ আগস্টের পর এক নেতা নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের কাছে ১০ লাখ টাকার চাঁদা দাবি করেছিল। তাকে ৩ লাখ টাকা চাঁদাও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে আরও ৭ লাখ টাকা চাঁদার জন্য এখনও চাপ দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বিকেএমইএ’র কাছ থেকেও ৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়েছে। সেই চাঁদার টাকা অবশ্যই তাকে ফেরত দিতে হবে। চাঁদার টাকা ফেরৎ না দিলে ওই ব্যক্তিকে নারায়ণগঞ্জ শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে লাল কার্ড দেখানো হবে।’
সভাপতি মাসুদুজ্জামানের এমন বক্তব্যের পর আলোচনা শুরু হলেও কে সেই চাঁদাবাজ তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে গতকাল সেই চাঁদাবাজ চাঁদার টাকা ফেরৎ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুজ্জামান। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানানো হয়। এসময় বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসাদুজ্জামানসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘নতুন সরকার দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ চেম্বার থেকে ৩ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়েছিলো। এছাড়া আরও একটি এসোসিয়েশন থেকে ৫লাখ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়েছিলো। সেটা চেম্বারের নবনির্বাচিত সভাপতি ফেরত আনার ব্যবস্থা করেছে। দায়িত্ব নেওয়ার পরেই মাসুদুজ্জামান বলেছিলো চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে এবং চাঁদার টাকা ফেরত দিতে হবে। আর আমরা চেম্বারে মাসুদুজ্জামানকে সভাপতি হিসেবে বসিয়ে যে একজন যোগ্য লোককেই বসিয়েছি, সেটা কিন্তু প্রমান হলো।’
এসময় মাসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি বলেছিলাম যে ব্যবসায়ীরা সন্ত্রাস মুক্ত থাকবে, চাঁদা মুক্ত থাকবে এবং যে কোন সমস্যায় চেম্বার তাদের পাশে থাকবে। চাঁদাবাজরা বুঝেছে এবং চাঁদার টাকাটা তারা ফেরত দিয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি শুভ সূচনা। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নিতিতে চলছি। আগামীতে আমরা কিভাবে কি করতে পারি এই ক্ষেত্রে সাংবাদিকদেরও আমাদের সহযোগীতা করতে হবে। আমি ব্যবসায়ীদের পাশে আছি এবং থাকবো। সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের প্রতিহত করা হবে। চাঁদাবাজদের প্রশ্রয় দেয়া হবে না। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।’
এদিকে, মাসুদুজ্জামানের এমন ভূমিকায় সাহস পাচ্ছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছেও মাসুদুজ্জামান হয়ে উঠেছেন ভরসার নাম। অনেকেই তাদের ঘিরে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছেন। যেখানে চাঁদাবাজ কিংবা প্রভাবশালীদের প্রভাবমুক্ত থাকবে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী অঙ্গন কিংবা ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো।